ইহুদীবাদী আগ্রাসন থেকে মসজিদুল আকসা মুক্ত করতে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে জাতীয় নির্বাচনের গণদাবী মানতে হবেঃ – মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক

ঢাকা, ২৮ জুলাই ২০১৭ঃ খেলাফত মজলিসের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেছেন, চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সব দলের অংশগ্রহনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন প্রয়োজন। দেশ ও জাতির কল্যান চাইলে সরকারকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে জাতীয় নির্বাচনের গণদাবী মেনে নিতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্যে রোডম্যাপ ঘোষনা করেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সরকার না চাইলে বা সহযোগিতা না করলে ইসির পক্ষে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। তাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যে রাজনৈতিক দলগুলার মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। সুষ্ঠু ও ভীতিহীন রাজনৈতিক ও নির্বাচনী পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার প্রথম সাধারণ অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মাওলানা ইসহাক বলেন, মুসলমানদের পবিত্র স্থান মসজিদুল আকসায় ইহুদীবাদী ইসরাইলী আগ্রাসন বিশ্ব মুসলিম কোনভাবেই বরদাস্ত করবে না। ইহুদীবাদী আগ্রাসনের কবল থেকে মসজিদুল আকসা ও ফিলিস্তিন মুক্ত করতে মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ইহুদীবাদী ইসরাইলের কবল থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস মুক্ত করা মুসলমানদের ইমানী দায়িত্ব।

আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় শাহজাহানপুরস্থ মাহববি আলী ইনস্টিটিউটে মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাকের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদেরের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন নায়েবে আমীর- মাওলানা সৈয়দ মজিবর রহমান, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, অধ্যাপক এম কে জামান, মাওলানা আবদুল বাসিত আজাদ, যুগ্মমহাসচিব- এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, শেখ গোলাম আসগর, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক- ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শফিউল ্অলম, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা এ কে এম আইউব আলী, প্রশিক্ষন সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হালিম, এডভোকেট মিজানুর রহমান, মাওলানা নোমান মাযহারী, অধ্যাপক মো: আবদুল জলিল, অধ্যাপক কে এম আলম, আলহাজ্ব আবু সালেহীন, মাওলানা নূরুজ্জামান খান, কে এম নজরুল হক, মাওলানা নূরুল আলম আল-মামুন, মাস্টার সিরাজুল ইসলাম, তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী, মাওলানা শামসুজ্জামান চৌধুরী, মাওলানা আবদুস সালাম চৌধুরী, ডা: আবদুল্লাহ খান, সৈয়দ মুহিবুর রহমান, মাওলানা ফরিদ আহমদ সিদ্দিকী, মাওলান রিয়াজূল হক কাসেমী, এবিএম সিরাজুল মামুন, ডা: শরীফ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক, মাস্টার আবদুল মজিদ, মাওলানা সৈয়দ মুশাহিদ আলী, অধ্যাপক বজলুর রহমান, মাওলানা আইউব আলী, হাফেজ মাওলানা জিন্নত আলী, মাওলানা আহমদ বিলাল, মাহবুব মোর্শেদ, মাওলানা আজিজুল হক প্রমুখ।

অধিবেশনে একটি শোক প্রস্তাব ও চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গ, বন্যা, পাহাড় ধ্বসে ক্ষতিগ্রস্থদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রসঙ্গ, চালের মূল্যবৃদ্ধি ও আর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা প্রসঙ্গ, পাঠ্যপুস্তক ও পাঠ্যসূচী নিয়ে নাস্তিক্যবাদী ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গ, ঢাকা মহানগরী ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা ও জনদুর্ভোগ প্রসঙ্গ, ফিলিস্তিনে ইসরাইলী বর্বরতা ও দেশে দেশে মুসলিম নির্যাতন প্রসঙ্গ এবং গো-রক্ষার নামে ভারতে নির্মমভাবে মুসলিম হত্যা-নির্যাতন প্রসঙ্গে ৭টি প্রস্তাব গ্রহীত হয়।
অধিবেশনে খেলাফত মজলিস যুক্তরাজ্য, রিয়াদ, জেদ্দা ও কুয়েত শাখার প্রতিনিধিসহ সারাদেশের ৬৫টি জেলা-মহানগরীর ডেলিগেটবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এতে শূরা সদস্যদের শপথ গ্রহন, কেন্দ্রীয় সংগঠন ও সারাদেশের শাখাসমূহের বিগত ৬ মাসের কাজের রিপোর্ট পেশ পর্যালোচনা হয়। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা করা হয় এবং আগামী ১৬- ৩১ অক্টোবর দেশব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচী ঘোষনা করা হয়। এ ছাড়া ৫টি বিভাগীয় শহরে ওলামা সম্মেলনের কর্মসূচী ঘোষনা করা হয়। ওলামা সম্মেলনের তারিখ হলো- খুলনা বিভাগ ১৯ অক্টোবর, সিলেট- ৯ নভেম্বর, ঢাকা-৩০ নভেম্বর, বরিশাল ৭ ডিসেম্বর, চট্টগ্রাম ২১ ডিসেম্বর।

খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার প্রথম সাধারণ অধিবেশন ২০১৭- এর প্রস্তাবাবলী

প্রস্তাব-১: চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গ
খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এ অধিবেশন উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, ৫ জানুয়ারীর ভোট ও ভোটার বিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকা বর্তমান সরকার আবারো যেনোতেনভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টায় করছে। যা দেশের জন্যে কোনভাবেই কল্যাণকর হবে না। এদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্যে রোডম্যাপ ঘোষনা করেছে নতুন নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে প্রাপ্ত পরামর্শ বাস্তবায়ন ইসির দ্বারা সম্ভব হবে না, যদিনা নির্বাচনকালীন সরকার তাদের সহযোগিতা করে। যদিনা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যে রাজনৈতিক দলগুলার মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতা হয়। তাই আজকের এ অধিবেশন দেশে বিরাজমান আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈকি সংকট নিরসনে সবদলের অংশগ্রহনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের গণদাবী মেনে নেয়ার জন্যে সরকারের প্রতি আহাবান জানাচ্ছে এবং এ জন্যে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের দমন-নিপিড়ন বন্ধ করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সরকারকে অবিলম্বে সংলাপে বসার আহবান জানাচ্ছে।
একই সাথে এ অধিবেশন গত ১৯ জুলাই খেলাফত মজলিস ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট আলেম মুফতি আশরাফ আলী ও ঈদুল ফিতরের আগের দিনে একই মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার মানিকগঞ্জ জেলার সাবেক সভাপতি মাওলানা মোঃ আশরাফ আলীকে ২০১৩ সালের নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার হেফাজতের আন্দোলনের সময়কার মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তাদের নি:শর্ত মুক্তি দাবী করছে।
প্রস্তাব- ২: বন্যা, পাহাড় ধ্বসে ক্ষতিগ্রস্থদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রসঙ্গ
খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এ অধিবেশন গভীর দু:খের সাথে লক্ষ্য করছে যে, পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট আগাম বন্যায় সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনার হাওড়াঞ্চলের বাঁধ ভেঙ্গে লক্ষ লক্ষ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে, ভারতের ফারাক্কসহ বিভিন্ন বাঁধ খুলে দেয়ায় উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, রংপুর, জামালপুর, সিলেট, মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন জেলায় বন্যায় লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাড়গাছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটিতে পাহাড় ধ্বসে বহু লোকের প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্যোগ দুর্বিপাকে ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলে সরকারের পক্ষ থেকে যেভাবে ত্রাণ ও পুর্বাসন তৎপরতার দরকার ছিলো তা চালাতে সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। নামকাওয়াস্তে, লোক দেখানো ত্রাণ তৎপরতা জনগণের চাহিদার তুলনায় ছিল খুবই অপ্রতুল। তাই এ অধিবেশন বন্যা, পাহাড় ধ্বস আর বাঁধ ভেঙ্গে হাওড়াঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবানহ ও পুনর্বাসনে সরকারের কার্যকর পদক্ষে গ্রহনের জোর দাবী জানাচ্ছে। একই সাথে সমাজের বিত্তবানদেরকে ক। ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় মানুষদের পাশে দাড়ানো আহ্বান জানাচ্ছে।

প্রস্তাব- ৩: চালের মূল্যবৃদ্ধি ও আর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা প্রসঙ্গ
খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এ অধিবেশন উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক চরম বিশৃঙ্খলা ও স্থবিরতা বিরাজ করছে। বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকার দুনীর্তির ঘটনা ঘটছে। সাধারণ মানুষের ব্যবসায়-বাণিজ্যে চলছে চরম মন্দা। বাজেটে ভ্যাট-ট্যাক্সের বাড়তি চাপ। ভয়াবহ বেকারত্ব। পরপর দুইবার জ্বালানী গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি। চালের বাজারে অস্থিরতা। রমজানের আগে প্রতি কেজি চালের দাম৮/১০টাকা বৃদ্ধি। বৈদেশীক আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরী পোশাক শিল্পে মন্দার কারণে ইতোমধ্যেই গত কয়েক বছরে শত শত গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আজকের এ অধিবেশন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিরাজমান বিশৃঙ্খলা দূর করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে দুনীর্তি রোধ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মাধ্যমে বিনিয়োগ ও ব্যবসায় বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, জ্বালানী গ্যাসের মূল্য প্রত্যাহার, চালের মূল্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমানোর জোর দাবী জানাচ্ছে।
প্রস্তাব- ৪: পাঠ্যপুস্তক ও পাঠ্যসূচী নিয়ে নাস্তিক্যবাদী ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গ
খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এ অধিবেশন উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, দেশবাসীর বাসীর আন্দোলন ও দাবী প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের বিভিন্ন শ্রেনীর পাঠ্যপুস্তক এবং পাঠ্যসূচী থেকে কিছু নাস্তিক্যবাদী ও বিতর্কিত লেখা- গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বাদ দেয়ায় এক শ্রেনীর তথাকথিত বুদ্ধিজীবীর গায়ে জ্বালা ধরেছে। অসাম্প্রদায়িকতার ধুয়া তুলে কতিপয় পরগাছা বুদ্ধিজীবী পাঠ্যপুস্তক ও পাঠ্যসূচীতে আবারো নাস্তিক্যবাদী বিষয়াদী অন্তর্ভূক্তির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এদের মনে রাখা উচিত ৯২ ভাগ মুসলমানের এ দেশের শিক্ষা-সংস্কৃৃতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের চিন্তা চেতনা ও বিশ্বাসের প্রতিফলন থাকতে হবে। তথাকথিত প্রগতির নামে কোন নাস্তিক্যবাদী ধ্যান ধারণা এদেশের শিক্ষা-সংস্কৃতিতে চাপিয়ে দেয়া যাবে না। খেলাফত মজলিসের এ অধিবেশন দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং পাঠ্যপুস্তক ও পাঠ্যসূচীতে নাস্তিক্যবাদী ও অপসংষ্কৃতি আমদানীর ঠিকাদার পরগাছা বুদ্ধিজীবীদের অপতৎপরতা বন্ধের জোর দাবী জানাচ্ছে।
প্রস্তাব- ৫: ঢাকা মহানগরী ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা ও জনদুর্ভোগ প্রসঙ্গ
খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এ অধিবেশন উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, রাজধানী ঢাকা মহানগরীতে অপরিকল্পিত নগরায়ন, অপর্যপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা, রাস্তাঘাটের দূরাবস্থার ফলে একটু ভারী বৃষ্টি হলেই ঢাকা মহানগরীর রাস্তাঘাট ডুবে যাচ্ছে। মশার কামড়জনিত চিকুনগুনিয়ার মহামাড়ি, জ্বালানী গ্যাসের স্বল্পতা, তীব্র জানজটসহ বিভিন্ন অব্যবস্থাপনায় নগরবাসী আজ নাকাল। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মানুষ জলাবদ্ধতার কারণে বহু দিন যাবৎ অবসহনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। চট্টগ্রামের বাস্তায় মটরযানের পরিবর্তে নৌকা যোগে অফিস আদালতে যাতায়াত করতে হচ্ছে চট্টগ্রামবাসীকে। ঢাকা মহানগরীসহ বিভিন্ন শহরে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অব্যবস্থাপনার ফলে সৃষ্ট জনদুর্ভোগের দায় সংশ্লিষ্ট নগর কর্তৃপক্ষ ও সরকারী সংস্থা কেউই এড়াতে পারে না। খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এ অধিবেশন ঢাকা মহানগরী ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অসহনীয় জনদুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্যে সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছে।

প্রস্তাব- ৬: ফিলিস্তিনে ইসরাইলী বর্বরতা ও দেশে দেশে মুসলিম নির্যাতন প্রসঙ্গ
খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এ অধিবেশন উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, ইহুদীবাদী ইসরাইল ফিলিস্তিনী জনগণের উপর যুগযুগ ধরে হত্যা- নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি ইসরাইলী সেনাবাহিনী মসজিদুল আকসায় জুম্মার নামজে বাঁধা দানের পর ইমাম ও মুসল্লীদের উপর গুলি বর্ষনসহ বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনীকে গুলি করে শহীদ করেছে।
খেলাফত মজলিসের এ অধিবেশন ফিলিীস্তনী জনগণের উপর ইসরাইলী বর্বরতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এবং মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা দুনিয়ার অশান্তির মূল ইহুদীবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিশ্বের শান্তিকামী মানুষদেরকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে ও অবিলম্বে মসজিদুল আকসা খুলে দিতে এবং ফিলিস্তিনী মুসলমানদের উপর জুলুম-নির্যাতন বন্ধে ইহুদীবাদী ইসরাইলকে বাধ্য করতে জাতিসংঘ, ওআইসি, মুসলিম বিশ্বসহ বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানাচেছ। একই সাথে এ অধিবেশন সিরিয়িা, ইরাক, লিবিয়া ও ইয়েমেনসহ মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত ও যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় উত্তরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনের দাবী জানাচ্ছে এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমান, কাশ্মীর, মিন্দানাওসহ বিভিন্ন মুসলিম জনপদে মুসলিম বিরোধী আগ্রাসন বন্ধের জোর দাবী জানাচ্ছে।

প্রস্তাব- ৭: গো-রক্ষার নামে ভারতে নির্মমভাবে মুসলিম হত্যা-নির্যাতন প্রসঙ্গ
খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এ অধিবেশন গভীর ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করছে যে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গো-রক্ষার নামে হিন্দু উগ্রবাদীদের দ্বারা ধারাবাহিকভাবে মুসলমানদের হত্যা নির্যাতন চরম আকার ধারণ করেছে। গরুর গোস্ত ভক্ষন বা বহন করার সন্দেহে ভারতে বহু মুসলমানকে হত্যা ও আহত করার ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের জঘন্য ঘটনা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ অমানবিক বর্বর নির্যাতন ও হত্যাকান্ডগুলো ভারতের বর্তমান সরকারের লোকদের ইন্ধনেই সংঘটিত হচ্ছে। বিগত ৩০ জুন ভারতের বিভিন্ন শহরে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজর সাধারণ মানুষ এ গো-সন্ত্রাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। এ জঘন্য বর্বর হত্যা-নির্যাতন কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। খেলাফত মজলিসের এ অধিবেশন ভারত সরকারকে অবিলম্বে সেদেশের সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর পরিচালিত পশুবাদী গো-সন্ত্রাসীদের ঘৃন্য আক্রমন ও হত্যাকান্ড বন্ধ করার দাবী জানান। সে দেশের সংখ্যালঘু মুসলমানদের নাগরিক অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহেনের জোর দাবী জানান।

৮. প্রস্তাব শোক: খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এ অধিবেশন খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক কেন্দ্রীয় উলামা বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা মনসুরুল হক খান, নূরানী শিক্ষা পদ্ধতির আবিষ্কারক মাওলানা ক্বারী বেলায়েত হুসেন, বাংলাদেশ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপা সভাপতি ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষনেতা শফিউল আলম প্রধান, জামিয়া শারিয়াহ মালিবাগের প্রবীণ মুহাদ্দিস বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড- বেফাক’র যুগ্মমহাসচিব মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়া মাদ্রাসার প্রধান মুফতি আল্লামা মোজাফফর আহমদ, প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন আল্লামা মোস্তফা আল হোসাইনী, শ্রমিক মজলিস কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক খেলাফত মজলিস বেতাগী উপজেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর কবির- এর ইন্তকালে এবং পাহাড় ধ্বসে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজরে প্রায় দেড় শতাধীক মানুষ মাটি চাপায় নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে মরহুমদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছে এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে।