ঢাকা, ৪ অক্টোবর ২০১৮ঃ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেছেন, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের নূন্যতম পরিবেশ নেই। সরকার বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের উপর জেল জুলুম নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। শত শত ভূতুরে মামলায় বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হয়রানী করা হচ্ছে। সরকার সমগ্র প্রশাসনযন্ত্রকে দলীয় স্বার্থে অপব্যাবহার করছে। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ থেকে ফেরার পথে গণহারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। সরকারী দলের মন্ত্রী এমপিরা নির্দিধায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। অথচ বিরোধী রাজনৈতিক দলের লাখ লাখ নেতাকর্মীকে আদালতের বারান্দায় অথবা ফেরারী হয়ে থাকতে হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনকে সরকারের আজ্ঞাবহ কমিশনে পরিনত করা হয়েছে। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের জন্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরী করা করেছে। তাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের উপর দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা তুলে দিতে হবে। সকল রাজবন্দীকে মুক্তি দিতে হবে। নির্বাচনের পূর্বে জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তথা সবার জন্যে সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

গত ২ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আমীরে মজলিস মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের নায়েবে আমীর মাওলানা সৈয়দ মজিবর রহমান, যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন, এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, শেখ গোলাম আসগর, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল হালিম, এডভোকেট মোঃ মিজানুর রহমান, অধ্যাপক মো: আবদুল জলিল, অধ্যাপক কে এম আলম, মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী, মাওলানা আজীজুল হক প্রমুখ।

বৈঠকে গৃহীত এক প্রস্তাবে সম্প্রতি আগরতলায় এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির এমপি সুব্রামানিয়াম স্বামী কর্তৃক বাংলাদেশ দখলের হুমকীর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশ দখলের হুমকী প্রদান করে বিজেপির এমপি সুব্রামানিয়াম স্বামী কুটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন ও এদেশে ধর্মীয় সম্প্রতি বিনষ্টেরও অপচেষ্টা চালিয়েছেন। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশে দিল্লীর শাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলে সুব্রামানিয়াম ক্ষমাহীন দু:সাহস দেখিয়েছেন। সুদীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশে মুসলিম, হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ সম্প্রীতি ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে সহাবস্থান করছে। বাংলাদেশের এ ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্যেই বাহির থেকে সুব্রামানিয়াম স্বামীর মত ব্যক্তিরা প্রকাশ্যে ও গোপনে উস্কানী দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে নয় বরং ভারতেই আজকে সংখ্যালঘুরা হত্যা, জুলুম নির্যাতনের শিকার। ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই রায়টের ঘটনা ঘটছে। গরুর গোস্ত খাওয়ার অপরাধে(!) মুসলমানদের নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে। আসামের প্রায় ৪০ লাখ বাংলা ভাষা ভাষী নাগরিককে বিদেশী আখ্যায়িত করে আসাম থেকে বের করে দেয়ার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অগ্রহনযোগ্য ও অমানবিক।

বৈঠকে বিজেপির এমপি সুব্রামানিয়াম স্বামী কর্তৃক বাংলাদেশ দখলের হুমকী দিয়ে প্রদত্ত কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত ও উস্কানীমূলক বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করে বাংলাদেশের জনগণের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার ও বাংলাদেশ সরকারকে ভারতীয় হাইকমিশনকে ডেকে সুব্রামানিয়াম স্বামী কর্তৃক বাংলাদেশ দখলের হুমকী দিয়ে প্রদত্ত বক্তব্যের আনুষ্ঠানিক ও কড়া প্রতিবাদ জানানোর দাবী জানানো হয়।

বৈঠকে সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় দাওয়াহ সম্পাদক মাওলানা নূরুজ্জামান খান ও ঢাকা মহানগরীর সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট রফিকুল ইসলামের আশু আরোগ্য কামান করে দোয়া করা হয় এবং সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট সুনামিতে কয়েক হাজার মানুষের প্রানহানী ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করে নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয় ও ইন্দোনেশিয়ার সরকার ও জনগণ যাতে এ শোক ও ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেন সেজন্যে মহান আল্লাহর দরবারে বিশেষ মুনাজাত করা হয়।