দেশে ফ্যাসীবাদী দু:শাসন চলছে: মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক

ঢাকা, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯: খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেছেন, দেশে একদলীয় ফ্যাসীবাদী দু:সাশন চলছে। সরকার তার বিরুদ্ধে ন্যূনতম সমালোচনা সহ্য করতে পারছে না। সরকার ও ছাত্রলীগের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলায় ডাকসু ভিপিকে ন্যাক্কারজনকভাবে হামলা করা হয়েছে। শিক্ষাঙ্গণগুলোতে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের দৌরাত্মে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। লাগামহীন দ্রব্যমূল্য, খুন, গুম, হত্যা, ধর্ষণ বেড়েই চলছে। বর্তমান সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয় তাই জনগণের কথা চিন্তা করে না। তারা নিজেদের আখের গোছানো আর ভারত তোষণে ব্যস্ত। খেলাফত মজলিসের সাধারণ পরিষদের ১০ম অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

আজ ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ বুধবার সকাল ৯টা হতে রাজধানীর গুলিস্তান কাজী বশির মিলায়তনে আমীরে মজলিস মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, নায়েবে আমীর- অধ্যক্ষ মাসউদ খান, মাওলানা সৈয়দ মজিবর রহমান, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, হাফিজ মাওলানা মজদুদ্দিন আহমদ, মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ, যুগ্মমহাসচিব- মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন, এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, শেখ গোলাম আসগর, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের নায়েবে আশীর অধ্যক্ষ শওকত হোসনে।
সাংগঠনিক সম্পাদক- ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সলের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত অধিবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এ কে এম আইউব আলী, কে এম নজরুল হক, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শফিউল অলম, মাওলানা তোফাজ্জ¦ল হোসাইন মিয়াজী, অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল হালিম, এডভোকেট মিজানুর রহমান, অধ্যাপক মো: আবদুল জলিল, অধ্যাপক কে এম আলম, মাওলানা শামসুজ্জামান চেীধুরী, ডা: শরীফ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক, মাষ্টার সাইফ উদ্দিন, ডাঃ এ এ তাওসিফ, মাষ্টার সিরাজুল ইসলাম, বুরহান উদ্দিন সিদ্দকিী, অধ্যাপক আবু সালমান, মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুল ইসলাম, এবিএম সিরাজুল মামুন, মাওলানা গোলাম কিবরিয়া, মাস্টার আবদুল মজিদ, মাওলানা সাঈদ আহমদ, মাওলানা সৈয়দ মুশাহিদ আলী, অধ্যাপক বজলুর রহমান, মাওলানা আইউব আলী, হাফেজ মাওলানা জিন্নত আলী, মাওলানা আহমদ বিলাল, অধ্যাপক মাওলানা খুরশীদ ্অলম, মাওলানা আজিজুল হক, আলহাজ্ব সদরুজ্জামান খান, মাওলানা এসএম সালাহ উদ্দিন, প্রভাষক মোঃ আবদুল করিম, অধ্যাপক এ কে এম মাহবুব আলম, মাওলানা সাঈদুর রহামন, মুফতি শিহাবুদ্দিন, মাওলানা ওযায়ের আমীন, হাজী নূর হোসেন, মাওলানা কাজী আসাদ উল্লাহ, মাওলানা আবদুল হাই প্রমুখ ।

অধিবেশনে সংগঠনের সারাদেশের জেলা, মহানগরী, থানা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের ডেলিগেটরা সংগঠন, আন্দোলন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে করণীয় বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ ও বক্তব্য প্রদান করেন।

মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, দেশ আজ এক মহাসংকটের মধ্যদিয়ে অতিক্রম করছে। একদিকে জনগণের বিরুদ্ধে অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ডাকসু ভবনের ভিতরে ঢুকে ডাকসুর ভিপিকে বর্বরোচিতভাবে পিটানো হয়েছে। অন্যদিকে দেশের মানুষের ঐক্য বিনষ্ট ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্ত চলছে। এসব ষড়যন্ত্র ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, যারা ক্ষমতায় আছেন বা ছিলেন তার জনগণের সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। আর মানুষের মনগড় মতবাদের দ্বারা জনগণের কল্যাণ সম্ভব নয় তা প্রমানিত সত্য। তাই আল্লাহ প্রদত্ত স্বাশত: জীবন বিধান ইসলাম তথা খেলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে জোরদার করতে হবে।

সিনিয়র নায়েবে আমীর ভাষা সৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খান বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈকি ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটি শূন্যতা বিরাজ করছে। ধন বৈষম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। গুটি কয়েক লোকের কাছে সমস্ত সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে যাচ্ছে। সে অর্থও আবার বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া টাকার পাহাড় জমছে। মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বেগম পাড়া গড়ে উঠছে। দুর্নীতি বন্ধ করতে না পারলে কোনভাবেই স্থিতিশীল উন্নয়ন সম্ভব নয়। দুর্নীতি- অন্যায়ের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

নায়েবে আমীর মাওলানা সৈয়দ মজিবর রহমান বলেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থে হিংসার রাজনীতি পরিহার করে পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সংকট সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলাকে একত্রে বসে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

নায়েবে আমীর মাওলানা মজদুদ্দিন আহমদ বলেন, অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে সবাইকে শান্তির ধর্ম ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে হবে। আজকে ভারতের আসামে যুগ যুগ ধরে বসবাসকারী মুসলমানদের বিতাড়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। কাম্মীরের বিশেষ মর্যাদা ক্ষুন্ন করে ভারত কাশ্মীরী মুসলমানদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। পার্শবর্তী দেশের এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে সরকারকে সরব ও প্রতিবাদী হতে হবে।

নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, ইসলামের বিজয়ের বিকল্প নেই। মানব রচিব মতবাদ মানুষকে মানুষের দাসে পরিনত করে। মানুষের প্রকৃত মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ইসলামী আদর্শ কায়েমের সংগ্রামে সবাইকে মাঠে নামতে হবে। সংগঠন তথা দ্বীনী আন্দোলনের কাজকে জোরদার করতে হবে।

নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ বলেন, বর্তমান সরকার রাতের আধারে ভোট চুরির সরকার। বর্তমান সরকার নতজানু সরকার। যারা দিল্লীতে বৃষ্টি হলে ঢাকায় ছাতা ধরেন তাদের দ্বারা দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষা সম্ভব নয়। এ সরকারকে হটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন বলেন, অসীম ত্যাগ আর কুরবানীর বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। সাম্য, ন্যায়, মানবাধিকার ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্য নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল সে লক্ষ্য আজও অর্জিত হয়নি। সমারিক শাসন, স্বৈরশাসন, একদলীয় শাসন আর ভোটবিহিীন সরকারের শাসনের যাতাকলে পিষ্ট দেশের জনগণ।
অধিবেশনে একটি শোক প্রস্তাবসহ রাজনৈতিক সংকট ও স্থবিরতা প্রসঙ্গ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্নীতি প্রসঙ্গ, হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন প্রসঙ্গ, শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন পরিস্থিতি প্রসঙ্গ, ভারতের সাম্প্রদায়িক এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইন প্রসঙ্গ ও দেশে দেশে মুসলিম নির্যাতন প্রসঙ্গে ৭টি প্রস্তাব গ্রহীত হয়।

খেলাফত মজলিসের সাধারণ পরিষদের ১০ম অধিবেশন ( ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯, বুধবার, সকাল ৯টা, কাজী বশির মিলনায়তন, ঢাকা) – এ গৃহীত প্রস্তাবাবলী

প্রস্তাব-১: রাজনৈতিক সংকট ও স্থবিরতা প্রসঙ্গ
খেলাফত মজলিসের সাধারণ পরিষদের ১০ম অধিবেশন গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, বিগত ৩০ ডিসেম্বর- ২০১৮ তে অগ্রহনযোগ্য, জালিয়াতি আর নীলনক্সার নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার দেশে একটি দু:সহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। প্রশাসনের উপর ভর করে টিকে থাকা সরকার দেশকে একটি পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। রাজনৈতিক সংকট এখন রাজনৈতিক শূন্যতায় পরিনত হয়েছে। ভিন্ন কোন মত পথ সরকার সহ্য করতে পারে না। বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার নির্যাতন করে কারারুদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। হামলা, মামলা, নির্যাতনে রাজনৈতিক অঙ্গণে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের মর্জি মত চলছে সবকিছু। আইনের শাসন, নিয়ম-নীতির কোন কিছুরই বালাই নেই। সর্বত্র এক ধরণের নৈরাজ্য বিরাজ করছে। জনমতের কোন তোয়াক্কা নেই। দেশের স্বার্থকে উপেক্ষা করে ভারত তোষণ নীতির চর্চায় ব্যস্ত সরকার। এহেন একদলীয় শাসনের ফল কারো জন্যে শুভ হতে পারে না। তাই আজকের এ অধিবেশন রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে অগ্রহনযোগ্য, জালিয়াতি আর নীলনক্সার নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে পুনরায় জাতীয় নির্বাচনের দাবী জানাচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতি নেতাকর্মীদের নামে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং একটি জনপ্রতিনিধিত্যশীল ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জনগণকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।

প্রস্তাব-২: নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্নীতি প্রসঙ্গ
খেলাফত মজলিসের সাধারণ পরিষদের ১০ম অধিবেশন গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছে যে, চাল, তেল, পিঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সরকারের ব্যর্থতার কারণে ২৫০ টাকা কেজিতে পিঁয়াজ কিনতে হয়েছে। এদিকে সরকার নতুনকরে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। এর আগে বছরের শুরুতে জ্বালানী গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যসহ বিভিন্ন জিনিসের দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের নাভি:শ্বাস উঠেছে।
এ অধিবেশ আরো লক্ষ্য করছে যে, দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চলছে এক চরম অরাজকতা। দেশের তৈরী পোশাক শিল্প খাতে সংকটের কারণে বহু গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। দেশে ঘুষ, দুর্নীতি চরম আকার ধারণ করেছে। মেগা দুর্নীতির কারণে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ধ্বস নেমেছে। বিভিন্ন সরকারী প্রকল্পে সীমাহীন দুর্নীতি চলছে। বালিশ, পর্দা, কয়লা, পাথর, সার্জিকাল গ্লাভস-কাঁচিসহ বিভিন্ন জিনিস ক্রয়ে ধারণাতীত দুর্নীতি সরকার ও প্রশাসনে মহাদুর্নীতির সামান্য চিত্র মাত্র। ক্যাসিনোকান্ডসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতারের নামে জনগণের আইওয়াশের চেষ্টা করা হলেও দুর্র্র্নীতির রাঘব-বোয়ালরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। আজকের এ অধিবেশন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিরাজমান বিশৃঙ্খলা দূর, সকল প্রকার ঘুষ-দুনীর্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জোর দাবী জানাচ্ছে। এবং জ্বালানী গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো ও নতুনকরে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রচেষ্টা বন্ধের জার দাবী জানাচ্ছে।

প্রস্তাব-৩: হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন প্রসঙ্গ
খেলাফত মজলিসের সাধারণ পরিষদের এ ১০ম অধিবেশন গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছে যে, দেশে গুম, খুন, হত্যা, ধর্ষণ, নারী-শিশু নির্যাতন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মানুষের জান মাল ইজ্জতের ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই। প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা, শিশু নির্যাতন, গণধর্ষণসহ জুলুম নির্যাতনের ঘটনা কোনভাবেই থামছে না। ঘরে-বাইরে কোথায়ও মানুষ নিরাপদ নয়। রাসুল সাঃ এর বিরুদ্ধে কটুক্তির প্রতিবাদে ভোলার বোরহানউদ্দিনে তাওহিদী জনতার উপর পুলিশের নির্বিচার গুলিতে ৪ জনকে শহীদ করা হয়েছে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও মানুষের নিরাপত্তাহীনতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দু:শাসন, নৈতিক অবক্ষয় ও বিচারহীনতার সংষ্কৃতির কারণে এ পরিস্থিতির ক্রম অবনতি হচ্ছে। খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এ অধিবেশন এ হত্যা নির্যাতনসহ পৈচাশিক বন্ধের দাবী জানাচ্ছে এবং আইনের শাসন কায়েম ও নৈতিক- ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপের জোর দাবী জানাচ্ছে।

প্রস্তাব-৪ : শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন পরিস্থিতি প্রসঙ্গ
খেলাফত মজলিসের সাধারণ পরিষদের এ অধিবেশন গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, সেক্যুলার শিক্ষা নীতির কারণে দেশে অনৈতিকতার সয়লাব চলছে। এরই মধ্যে চার্লস ডারউইনের বিতর্কিত ‘বিবর্তনবাদ’ বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেনীর পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভূক্তি করে নতুন প্রজন্মকে নাস্তিক্যবাদের দিকে ধাবিত করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাঙ্গনগুলোতে চলছে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের চরম নৈরাজ্য। তাদের হাতে হাতে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা জিম্মি হয়ে পরেছে। দেশের স্বার্থ বিরোধী চুক্তির বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখার কারণে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে পৈচাশিক কায়দায় পিটিয়ে হত্যা করেছে ছাত্র লেিগর নেতাকর্মীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত ভিপি নূরুল হক নূর এর উপর বারবার আক্রমন করা হচ্ছে। সর্বশেষ গত ২২ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের ব্যানারে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা ডাকসু ভবনে ডাকসু ভিপি নূরসহ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ছাত্রদের উপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে বহু ছাত্রকে মারাত্মকভাবে আহত করেছে ছাত্রলীগ। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনসহ অনেককে মেরে ডাকসু ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হয়েছে। আহত অনেকে ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে মৃত্যুর মুখোমুখি। খেলাফত মজলিসের সাধারণ পরিষদের এ অধিবেশন ডাকসু’র ভিপি নূরুল হক নূরসহ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীদের উপর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নামে ছাত্রলীগের বর্বরোচিত হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছে। একই সাথে এ অধিবেশন সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন, পাঠ্যসূচী থেকে ডারউইনের বিতর্কিত নাস্তিক্যবাদী ‘বিবর্তনবাদ’ বাদ দিয়ে নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন পাঠ্যসূচী অন্তর্ভূক্তির জোর দাবী জানাচ্ছে।

প্রস্তাব- ৫: ভারতের সাম্প্রদায়িক এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইন প্রসঙ্গ
খেলাফত মজলিসের সাধারণ পরিষদের এ ১০ম অধিবেশন গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, ভারতের আসামে নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসি’র নামে ১৯ লক্ষ বাংলাভাষী ও মুসলমানকে নাগরিকত্বহীন করা হয়েছে। পশ্চিবঙ্গেও এধরনের এনআরসি করার চেষ্টা করছে। এসব বাংলাভাষী ও মুসলমানদের বাংলাদেশে পুশইন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে নতুন করে মুসলিম বিদ্বেষী নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন করা হয়েছে। ভারতের স্বাধীনতার অগ্রসেনানী মুসলমানদের ভারত থেকে বিতাড়ণের অপচেষ্টা করছে হিন্দুত্ববাদী বিজেপী সরকার। ভারতের সাম্প্রদায়িক এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে খোদ ভারতেই তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন প্রদেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে লাখো মানুষ রাজ পথে নেমেছে। ভারত সরকার আন্দোলন দমাতে অন্ততঃ ২৩ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে। কিন্তু সেদেশের জনগণের আন্দোলনকে দমাতে পারছে না। খেলাফত মজলিসের এ অধিবেশন ভারতের মোদি সরকারের সাম্প্রদায়িক এনআরসি ও সিএএ’র বিরুদ্ধে ভারতীয় জনগণের ন্যায়সংগত আন্দোলনের প্রতি নৈতিক সমর্থন জানাচ্ছে এবং ভারতের আন্দোলকারীদের উপর গুলি- নির্যাতন বন্ধ ও অবিলম্বে মুসলিম বিদ্বেষী এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইন বাতিলের জোর দাবী জানাচ্ছে।

প্রস্তাব- ৬: দেশে দেশে মুসলিম নির্যাতন প্রসঙ্গ
খেলাফত মজলিসের সাধারণ পরিষদের এ অধিবেশ অধিবেশন গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, ধর্মীয় কারণে ভারতের মুসলমানরা হত্যা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মীরীদের অধিকার খর্ব করা হয়েছে। অর্ধ শতাব্দিরও বেশী সময় ধরে ফিলিস্তিনী জনগণের উপর ইহুদীবাদী ইসরাইল হত্যা নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের পার্শবর্তী দেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর সেদেশের সরকার, সেনাবাহনী ও সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়িক গোষ্ঠী যুগযুগ ধরে জাতিগত দমন পিড়ন, গণহত্যা ও বর্ববরতা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহনকারী ১০ লক্ষাধীক মজলুম রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের কোন সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না। বরং আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়ার করা মামলার শুনানীতে জঘন্য মিথ্যাচার করেছে মিয়নমারের ডি ফ্যাক্টো নেতা অং সান সুকী। চীনের উইঘুর মুসলমানদের উপর চীনা কমিউনিস্ট শাসকরা নর্মম নির্যাতনে থামছে না। লক্ষ লক্ষ উইঘুর মুসলমানকে নির্যাতন ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে। সেখানে মুসলিম শিশুদেরকে পিতা-মাতা থেকে আলাদা করে ফেলা হচ্ছে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের উদ্বাস্তু মানুষের দুর্দশার শেষ নেই। আজকের এ অধিবেশন ফিলিস্তিন, আরাকান, চীনের উইঘুর, কাম্মীর, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলমানদের উপর পরিচালিত হত্যা নির্যাতন ও নির্মূল অভিযান অবিলম্বে বন্ধের জোর দাবী জানাচ্ছি।

৭. শোক প্রস্তাব: খেলাফত মজলিসের সাধারণ পরিষদের এ ১০ম অধিবেশন খেলাফত মজলিস বিশ্বনাথ উপজেলার সাবেক সভাপতি মাওলানা নূরুল ইসলাম বিশ্বনাথী মঈজপুরী, খেলাফত মজলিস ফেঞ্জুগঞ্জ উপজেলার সাবেক সভাপতি মাওলানা আবদুল মজিদ, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য নয়াটোলা এ ইউ এন মডেল কামিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা সাফি উদ্দিন ভূঁইয়া, খেলাফত মজলিস নীলফামারী জেলা সভাপতি অধ্যাপক আবদুল ওয়াহেদ জামান, প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ‘কাশফুল বারী শরহু সহিহীল বুখারী’র লেখক খেলাফত মজলিস লক্ষ্মীপুর জেলার সাবেক উপদেষ্টা মুফতি মুহাম্মদ ইদরিস কাসেমী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র ভাইসচেয়ারম্যান ঢাকার সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা, খেলাফত মজলিস মেহেরপুর জেলার সহসভাপতি মাওরঅনা মোসলেম উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব অধ্যাপক হাফেজ মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মৃত্যুবরণকারী খেলাফত মজলিস কুমিল্লা উত্তর জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব মোস্তফা কামাল, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কৈয়গ্রাম মাদ্রাসার মুহতামিম আল-জামিয়াতুল আহলিয়া হাটহাজারী মাদ্রাসার শুরা সদস্য আল্লামা হুসাইন আহমদ, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা সহসভাপতি আবদুল খালেক, খেলাফত মজলিস বরিশাল মহানগরীর সাংগঠনিক সম্পাদক বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস বরিশাল মহানগরীর সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য অধ্যাপক এ টি এম মুজাহিদুল ইসলাম, খেলাফত মজলিস পরশুরাম উপজেলার সহসভাপতি মাওলানা আবুল কাশেম ইন্তিকালে, সম্প্রতি ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার কসবার মন্দবাগ এলাকায় ঢাকাগামী তুর্ণা নিশীথা ও চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৬ জন, কেরানীগঞ্জে প্লাস্টি কারখানায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ২০ জন ও গাজীপুরে ফ্যান তৈরীর কারখানায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ১০ জন শ্রমিক নিহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে মরহুমদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছে এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে।