নতুন শিক্ষানীতি ও শিক্ষাক্রম জাতি প্রত্যাখ্যান করেছে – শায়খুল হাদিস মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী

ঢাকা, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩: খেলাফত মজলিসের আমীর শায়খুল হাদীস মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী বলেছেন, বর্তমান সরকার ভোট কারচুপি করে, দিনের ভোট রাতে করে ক্ষতায় এসেছে। দুর্নীতি–লুটপাট করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, এখন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা ধ্বংসের চক্রান্তে নেমেছে। নতুন শিক্ষানীতি ও শিক্ষাক্রমকে জাতি প্রত্যাখ্যান করেছে। যতদিনে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাস–মূল্যবোধ, সংস্কৃতি প্রতিস্থাপিত না হবে ততদিন আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সরকারকে অবিলম্বে দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে আজকে যে ৮ দফা দাবী পেশ করা হয়েছে তা আদায়ে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সর্বাত্মক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে খেলাফত মজলিস আয়োজিত এক গণ–সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

উক্ত গণসমাবেশে চলমান আর্থ–সামাজিক, শিক্ষা ও রাজনৈতিক সংকট সমাধানের লক্ষ্যে খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে ৮ দফা দাবীনামা পেশ ও কর্মসূচি ঘোষণা করেন মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। পেশকৃত দাবীসমূহ হচ্ছে: ধর্মীয় শিক্ষা সংকোচন নীতি বন্ধ ও বিতর্কিত পাঠ্যক্রম বাতিল করা, দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, নির্বাচনে সবার জন্যে সমান সুযোগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখা, গ্রেফতারকৃত আলেম–উলামা ও রাজনৈতিক নেতা–কর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার করা, রাজনৈতিক সভা–সমাবেশের অবাধ সুযোগ নিশ্চিত করা, পণ্যমূল্য কমিয়ে জনদুর্ভোগ লাঘব ও দুর্নীতি নির্মূল করা, বেকার সমস্যা সমাধান ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকুরীতে নিয়োগ দান করা।

এসব দাবী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ড. আহমদ আবদুল কাদের ৬ মাস ব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঘোষিত কর্মসূচি হচ্ছে: আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি জেলা–মহানগরী পর্যায়ে বিক্ষোভ, আগামী ২৯ এপ্রিল উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ/মানববন্ধন/গণসমাবেশ, আগামী ২৭ মে ও ২৪ জুন দেশব্যাপী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ, পবিত্র রমজান মাসে তথা আগামী ১ এপ্রিল ৮ দফার উপর আলেম, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও রাজনীতিকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা।

আজ ১১ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল ১০:৩০ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সমানে খেলাফত মজলিসের যুগ্ম–মহাসচিব ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল ও অধ্যাপক আবদুল জলিলের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত গণ–সমাবেশে বক্তব্য রাখেন– নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল বাসিত আজাদ, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, যুগ্ম–মহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিজানুর রহমান, দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক মুফতী শিহাবুদ্দিন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. শরীফ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক, যুব বিষয়ক সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম তুহিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা আজিজুল হক, মহানগরী উত্তর সভাপতি মাওলানা সাইফ উদ্দিন আহমদ খন্দকার, শ্রমিক মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাজী নূর হোসেন, ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিলাল আহমদ চৌধুরী, এডভোকেট সারওয়ার রহমান চৌধুরী, মাওলানা নুরুজ্জামান নোমানী, এডভোকেট রফিকুল ইসলাম, মাওলানা মুজিবুর রহমান ফরাজী, হাফেজ মাওলানা জাকির হোসেন, মুফতি আলী আকরাম, মাওলানা আনোয়ারুল করীম, মাওলানা ফরিদ আহমদ হেলালী, প্রিন্সিপাল মাওলানা মতিউর রহমান ফরাজী প্রমুখ।

নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ বলেন, নিশি রাতের ভোটে নির্বাচিত সরকার দেশকে দেউলিয়া করে ফেলেছে। এখন সমাধান হচ্ছে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করা।

নায়েবে আমীর মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী বলেছেন, জনগণ ’৭২ সালের কুদরত–ই–খোদা কমিশনের ইসলাম বিরোধী শিক্ষা নীতি বাস্তায়িত হতে দেয় নি। বর্তমান বিভ্রান্তিকর ও ধর্মবিরোধী শিক্ষাক্রমও বাস্তবায়িত হতে দিবে না।

যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, ইসলামবিরোধী, দেশের স্বার্থ ও স্বাধীনতা–সংস্কৃতিবিরোধী শিক্ষা কারিকুলামের সাথে জড়িতদের দেয়া সম্মানী ফিরিয়ে নিতে হবে। তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাদের কালো তালিকাভূক্ত করে আগামীতে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজে সম্পৃক্ত করা যাবে না।

যুগ্ম-মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী বলেন, দেশের জনগণ ও সকল রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে আর কোনো টালবাহানা চলবে না। নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন দিতে হবে।

সমাবেশ শেষে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল প্রেসক্লাব থেকে শুরু হয়ে পল্টন মোড়, বিজয়নগর, নাইটিংগেল মোড় হয়ে পল্টন টাওয়ারের সামনে এসে শেষ হয়।

বর্তমান আর্থ–সামাজিক–শিক্ষা ও রাজনৈতিক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে খেলাফত মজলিসের ৮ দফা দাবীঃ

১. ধর্মীয় শিক্ষা সংকোচন নীতি বন্ধ ও বিতর্কিত পাঠ্যক্রম বাতিল করা: সাধারণ শিক্ষায় ধর্মীয় শিক্ষা সংকোচন নীতি বন্ধ করতে হবে এবং সকল বোর্ড পরীক্ষায় ধর্মীয় বিষয়কে আবশ্যকীয় বিষয় হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। বর্তমান শিক্ষানীতির আলোকে প্রণীত স্কুল–মাদ্রাসার পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলামী চিন্তা–বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক যাবতীয় বিষয়াদী বাদ দিতে হবে। সমতা সৃষ্টির নামে সাধারণ পাঠ্য বইয়ের মাধ্যমে মাদ্রাসায় ইসলামী শিক্ষার মান ও পরিবেশ কোন ক্রমেই ক্ষুন্ন হতে দেয়া যাবে না।

২. দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করা: রাজনৈতিক সংকট উত্তোরণে নির্বাচনের তিন মাস পূর্বে জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালিন বা অন্তবর্তীকালিন সরকার গঠন করে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে এবং নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করত হবে।

৩. নির্বাচনে সবার জন্যে সমান সুযোগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: নির্বাচনে সবার জন্যে সমান সুযোগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং পেশীশক্তি ও অর্থশক্তি মুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

৪. দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখা: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে। নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমুহকে আস্থায় না নিয়ে নির্বাচন কমিশন বা সরকারের একক সিদ্ধান্তে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না।

৫. গ্রেফতারকৃত আলেম–উলামা ও রাজনৈতিক নেতা–কর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার করা: গ্রেফতারকৃত আলেম–উলামা ও বিরোধী রাজনৈতিক নেতা–কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে এবং তাদের উপর দায়েরকৃত সমস্ত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

৬. রাজনৈতিক সভা–সমাবেশের অবাধ সুযোগ নিশ্চিত করা: বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহকে সভা–সমাবশ করার অবাধ সুযোগ দিতে হবে। বিরোধী দলসমুহের কর্মসূচিতে বাঁধা দান, হয়রানি, গ্রেফতার, মামলা, হামলা বন্ধ করতে হবে।

৭. পণ্যমূল্য কমিয়ে জনদুর্ভোগ লাঘব ও দুর্নীতি নির্মূল করা: জ্বালানী তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কমিয়ে ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে এনে জনগণের দূর্ভোগ লাঘব করতে হবে এবং সাথে সাথে অর্থ পাচার রোধ ও বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরৎ আনাসহ সর্বক্ষেত্রে দূর্নীতি নির্মূল করার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৮. বেকার সমস্যা সমাধান ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকুরীতে নিয়োগ দান: দেশের বেকারত্ব দূর করার জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ সর্বাত্মক ব্যবস্থা অবলম্বনের পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সকল প্রকার বৈষম্য দূর করে সব সরকারী চাকুরিতে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দানের ব্যবস্থা করতে হবে।