মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ আমীরে মজলিস ও ড. আহমদ আবদুল কাদের মহাসচিব নির্বাচিত

গণ-অভ্যুত্থানের সুফল পেতে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে আন্তদলীয় সংলাপ জরুরি – খেলাফত মজলিস

ঢাকা, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫:
খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ বলেছেন, দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ন্যুনতম জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে গণ-অভ্যুত্থানের সুফল স্থায়ী হবে না। দেশ আবারো গভীর খাদের কিনারায় পৌঁছাবে যেখান থেকে উত্তরণ অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার ও তাদের বিদেশী প্রভুর ইন্ধনে বিগত মাসগুলোতে দেশে সাম্প্রদায়িক উস্কানি, পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীলতা, বিভিন্ন অন্যায্য দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজধানীতে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করা হয়েছিল। গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে ঐক্য অটুট রাখতে স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে আন্তদলীয় সংলাপ অব্যাহত থাকা দরকার। প্রকাশ্যে বিভেদ ও কাদা ছোঁড়াছুড়ি বন্ধ করে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য সুসংহত করা সময়ের অপরিহার্য্য দাবি।
বিশাল চ্যালেঞ্জ নিয়ে পথচলা শুরু করলেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে সফলতা আনতে সক্ষম হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আবার কিছু অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে তাদেরকে সমালোচনারও মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এই সরকার ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দোসরদেরকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কাঠগড়ায় এখনো দাঁড় করাতে পারেনি। জুলাই গণহত্যার দায়ে গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোন চার্জশিট জমা দিতে পারেনি। ৫ মে গণহত্যা সহ খুনী হাসিনার আমলে সংঘটিত সকল গুম ও হত্যাকাÐের আসামীদের বিরুদ্ধে এখনো সুস্পষ্ট সাক্ষীপ্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি প্রসিকিউশন। বিগত সাড়ে ১৫ বছরে আলেম-উলামা ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা এখনো প্রত্যাহার হয়নি। ফ্যাসিস্টের তাবেদার কিছু আমলা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রশাসনে এখনো ঘাপটি মেরে রয়েছে। শহীদ ও আহত বেশ কিছু পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগীতার অভিযোগ উঠেছে। প্রায় শতাধিক পণ্যের উপর অতিরিক্ত কর ও ভ্যাট আরোপের প্রজ্ঞাপন জারি করে জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি করা হয়েছে। এখনো পাচারকৃত কোন অর্থ ফিরিয়ে আনতে পারেনি। গত সেপ্টেম্বর মাসে ১১ টি সংস্কার কমিশন গঠন করলেও এখনো পর্যন্ত মাত্র ৪টি কমিশন তাদের রিপোর্ট জমা দিতে সক্ষম হয়েছে।
আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উপরোক্ত সীমাবদ্ধতাগুলো উত্তরণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, দ্রæত সময়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ২০২৫ এর মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা, আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসকে সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে প্রতিস্থাপন করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল ও কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন না করার নিশ্চয়তা সহ সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাকী পরিবর্তনের চেয়েও সেবা এবং নৈতিক মানগত উন্নতি নিশ্চিত করার প্রতি আহহ্বান জানাচ্ছি। খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সাধারণ অধিবেশন ২০২৫ এ সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথাগুলো বলেন।
আজ সকাল ৯টায় শাহজাহানপুর মাহবুব আলী ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা অধিবেশনে ২০২৫-২৬ সেশনের জন্য ১১৮ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ নির্বাচন করা হয় এবং শপথ অনুষ্ঠিত হয়। আমীরে মজলিস নির্বাচিত হন মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, মহাসচিব নির্বাচিত হন ড. আহমদ আবদুল কাদের। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের নির্বাচিত অন্যান্য সদস্যবৃন্দ হচ্ছেন, নায়েবে আমীর- মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা হাফিজ মজদুদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক আবদুল্লাহ ফরিদ, মাওলানা আবদুল কাদির সালেহ, অধ্যাপক সিরাজুল হক, মাওলানা সাইয়্যেদ ফেরদাউস বিন ইসহাক, মুফতি আবদুল হামিদ, যুগ্ম মহাসচিব- এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, এ বি এম সিরাজুল মামুন, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, অধ্যাপক মো: আবদুল জলিল, আলহাজ¦ সদরুজ্জামান খান, ডা: এ এ তাওসিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক- এডভোকেট মো: মিজানুর রহমান, অধ্যাপক কাজী মিনহাজুল আলম, অধ্যাপক ড. আহমদ আসলাম, মাওলানা সামছুজ্জামান চৌধুরী, মাস্টার আবদুল মজিদ, অধ্যাপক মাওলানা এসএম খুরশিদ আলম, মাওলানা শেখ সালাহ উদ্দিন, সহকারি সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান, ডা. হাসানুজ্জামান হেলাল, ডা. আসাদুল্লাহ, খন্দকার শাহাবুদ্দিন আহমদ, মুফতি আবদুল হক আমিনী, বোরহান উদ্দিন সিদ্দিকী, মাওলানা হাফেজ আবু সালমান, অধ্যক্ষ আবদুল হান্নান, বায়তুলমাল সম্পাদক আলহাজ্ব আবু সালেহীন, সহকারি বায়তুলমাল সম্পাদক জিল্লুর রহমান, সমাজকল্যাণ ও শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আমিনুর রহমান ফিরোজ, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক একেএম মাহবুবুল আলম, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা আবু সালমান, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মো: জহিরুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাওলানা রুহুল আমীন সাদী, প্রচার, প্রকাশনা ও তথ্য সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুল হাফিজ খসরু, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রিফাত হোসেন মালিক, দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক মুফতি শিহাবুদ্দীন, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক প্রভাষক আবদুল করিম, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট হাফেজ মাওলানা শায়খুল ইসলাম, উলামা বিষয়ক সম্পাদক মুফতি আলী হাসান উসামা, যুব বিষয়ক সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম তুহিন, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ ড. মাহবুবুর রহমান, সহকারি দফতর সম্পাদক মুক্তিযুদ্ধা ফয়জুল ইসলাম, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা নাসরিন বেগম, মহিলা বিষয়ক সহকারি সম্পাদিকা রায়হানা লোপা, নির্বাহী সদস্য- মাওলানা সৈয়দ মুশাহিদ আলী, মাওলানা সাঈদ আহমদ, মাওলানা মোহম্মদ আলী, মাওলানা আবদুল হাই, মাওলানা সাইয়্যেদুর রহমান, অধ্যাপক ড. মাহবুব মোরশেদ, মাওলানা মাহবুবুর রহমান হানিফ, মাওলানা আফতাব উদ্দিন, কাজী আসাদ উল্লাহ, আলহাজ্ব নূর হোসেন, সাখাওয়াত হোসাইন মোহন, মাওলানা সামসুদ্দিন, মাওলানা আহমদ বেলাল, কাজী ফিরোজ আহমদ, সিরাজুল ইসলাম, হাফেজ জিন্নত আলী, মাওলানা নেহাল আহমদ, মাওলানা নুরুল হক, মাওলানা হোসাইন নূরী চৌধুরী, মাওলানা ফারুক আহমদ ভূঁইয়া, মাওলানা নজরুল ইসলাম মাজহারী, শায়খুল হাদীস মাওলানা আবদুস সামাদ, মাওলানা নুরুল আমিন, গোলাম মোস্তফা, মাওলানা আবু সাঈদ, কর্ণেল (অব.) ডা: এমদাদুল হক, আমীর আলী হাওলাদার, মাওলানা নাসির উদ্দিন, এডভোকেট মাওলানা রফিকুল ইসলাম, সভাপতি-ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ, সভাপতি-ঢাকা মহানগরী উত্তর, সাধারণ সম্পাদক-ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ, সাধারণ সম্পাদকÑঢাকা মহানগরী উত্তর এবং মহিলা সদস্য ৩৫ জন।
৬৪ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদ (২০২৫-২০২৬):
অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, অধ্যক্ষ মাসউদ খান, মাওলানা মুফতি রশীদ আহমদ ফারুক বর্ণভী, প্রফেসর ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী-ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, মাওলানা নোমান মাজহারী- ঢাকা, জিয়াউল হক শামীম- ঢাকা, ডা. আবদুল্লাহ খান, ঢাকা, ড. আবদুল লতিফ মাসুম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়, এডভোকেট বদরুদ্দোজা, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, ঢাকা, ড. ইউসুফ আলী, গাজীপুর, মাওলানা তৈয়বুর রহমানÑ বাগের হাট, মাওলানা মুহাম্মদ সালেহ, খুলনা, সৈয়দ মুহিবুর রহমান, সিলেট, হাফেজ মাওলানা নুরুজ্জামান, সিলেট, মাওলানা গোলাম কিবরিয়া-খুলনা মহানগরী, মাওলানা আবদুল কাইয়ুম সোবহানী-ঢাকা, হাফেজ মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ- বি বাড়ীয়া, মাওলানা মাহবুবুল হক কাসেমী- ঢাকা, মাওলানা আবু তাহের জিহাদী- নারায়ণগঞ্জ, মাওলানা ইমাম উদ্দিন- সুনামগঞ্জ, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, চাঁদপুর, মাওলানা ফরিদ আহমদ সিদ্দিকী, কিশোরগঞ্জ, মাওলানা বুরহার উদ্দিন, চট্টগ্রাম, মাওলানা আবদুল মান্নান, ঢাকা, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, রংপুর, হাফেজ মাওলানা তাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম, অধ্যাপক আলী রেজা-গোপালগঞ্জ, অধ্যাপক আতাউর রহমান পীর – সিলেট, মাওলানা আবু তাহের – লক্ষ্মীপুর, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম-খুলনা, মুক্তিযোদ্ধা ক্বারী বজলুল হক- নারায়ণগঞ্জ, শায়খুল হাদিস মাওলানা আসাদুল্লাহ-জয়পুরহাট, মাওলানা রুহুল আমিন চৌধুরী-নোয়াখালী, মাস্টার সাইফুদ্দিন আহমদ-লক্ষ্মীপুর, মাস্টার সিরাজুল ইসলাম, রংপুর, ডা. আবু হোসেন-চট্টগ্রাম, অধ্যক্ষ মাওলানা তাজুল ইসলাম- ভোলা, মাওলানা আবুল কাসেম-পটুয়াখালী, মাওলানা মোহাম্মদ মুছা, মানিকগঞ্জ, মাওলানা আবু মুসা- কক্সবাজার, মাওলানা শরাফত আলী-কুমিল্লা, মাওলানা ফখরুদ্দীন-কুমিল্লা, মাওলানা আলী আহমদ-গোপালগঞ্জ, ড. তারেক মুহাম্মদ তওফিকুর রহমান-রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, মোরশেদ আলম খন্দকার-ঢাকা, লেফটেনেন্ট কর্ণেল (অব.) এম মুসলেম উদ্দিন-ঢাকা, অধ্যাপক বজলুর রহমান, সিলেট, মাও. বদরুল আলম হামিদী বরুণা, মাও. আবদুল কাদির-বরিশাল, মাও শরীফুল ইসলাম-ঢাকা মহানগরী উত্তর, মাওলানা নজরুল ইসলাম-ময়মনসিংহ, ডা. শরীফ মুহাম্মদ মুসাদ্দেক, নারায়ণগঞ্জ, মাওলানা শওকত আলী- ইউরোপ, মাওলানা আবদুল মুকিত আজাদ- ইউরোপ, মাওলানা নূরুল আলম আল মামুন- কক্সবাজার, ড. মাওলানা নেসার উদ্দিন- লক্ষ্মীপুর, শায়খুল হাদীস মাওলানা সাব্বির আহমদ- বরিশাল, মাওলানা খাজা ওলী আহমদ- চাঁদপুর, ডা: নজরুল ইসলাম- মৌলভীবাজার, মাওলানা সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী – ছারছিনা দরবার শরীফ, মাওলানা মীর মোহাম্মদ কাসেম- হাটহাজারী, প্রিন্সিপাল মজিবুর রহমান- কিশোরগঞ্জ, মাওলানা আশরাফুল হক নূরী- নীলফামারী, মাওলানা মোহাম্মদ আলী – রংপুর।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত উক্ত অধিবেশনে সংগঠনের সারাদেশের কাজের পর্যালোচনা করা হয়। এছাড়াও ৫টি বিষয়ে প্রস্তাব পাশ করা হয়েছে। প্রস্তাবগুলো হলো:
প্রস্তাব-১: শোক প্রস্তাব:
খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সাধারণ অধিবেশন ২০২৫ জুলাই-আগস্ট জুড়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত এবং পরবর্তিতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী সকল শহীদ, খেলাফত মজলিস মাদারীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম মহানগর খুলশী থানা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মাহমুদুল হাসান, পটুয়াখালী বাউফল উপজেলা সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ ইউনুস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টা হাসান আরিফ ও খুলনার বিশিষ্ট আলেম মাওলানা রফিকুর রহমানের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করছে এবং সকলের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে মাগফিরাত কামনা করছে।
প্রস্তাব-২: স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য প্রসঙ্গ
খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সাধারণ অধিবেশন ২০২৫ গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, ৫ আগস্ট ২০২৫ গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তিতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী একের পর এক অপতৎপরতা পরিচালিত হচ্ছে। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার ও তাদের বিদেশী প্রভুর ইন্ধনে বিগত মাসগুলোতে দেশে সাম্প্রদায়িক উস্কানি, পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীলতা, বিভিন্ন অন্যায্য দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজধানীতে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করা হয়েছে। আমরা দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে এসব অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা জানাই। দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের সূচনা ঘটিয়েছে তা যে কোন মূল্যে রক্ষা করতে হবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিরোধী ও ফ্যাসিবাদ পুনপ্রতিষ্ঠার যে কোন অপচেষ্টা দেশপ্রেমিক জনতা রুখে দিবে ইনশাআল্লাহ।
দলীয় মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ন্যুনতম জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে গণ-অভ্যুত্থানের সুফল আসবে না। দেশ আবারো গভীর খাদের কিনারায় পৌঁছাবে যেখান থেকে উত্তরণ অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। ‘বিভেদ নয় ঐক্য, কল্যাণমূলক রাষ্ট্র’ এই প্রতিপাদ্যে বিগত ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ঐতিহাসিক সোরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফত মজলিস সাধারণ পরিষদের দ্বাদশ অধিবেশন আয়োজন করে। অভ্যুত্থান পরবর্তি সময়ে এই প্রথম দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ খেলাফত মজলিসের আহ্বানে এক মঞ্চে এসে ঐক্যের কথা বলেছেন এবং পরবর্তিতে সংলাপে অংশ নিয়েছেন। খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সাধারণ অধিবেশন মনে করে দলীয় মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে আন্তদলীয় সংলাপ অব্যাহত থাকা দরকার। প্রকাশ্যে বিভেদ ও কাদা ছোঁড়াছুড়ি বন্ধ করে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য সুসংহত করা সময়ের অপরিহার্য্য দাবি।
প্রস্তাব-৩: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বিভিন্ন সংস্কার কমিশন ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রসঙ্গ
খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সাধারণ অধিবেশন ২০২৫ লক্ষ্য করছে যে, গণধিকৃত শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৯ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে প্রধান করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। খেলাফত মজলিস সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি নতুন উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান। বিশাল চ্যালেঞ্জ নিয়ে পথচলা শুরু করলেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে সফলতা আনতে সক্ষম হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আবার কিছু অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে তাদেরকে সমালোচনারও মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিতর্কিত ব্যক্তিদের উপদেষ্টা নিয়োগ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অর্থনৈতিক সংকট সহ বেশ কিছু জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বেশ কিছু দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে।
এই সরকার ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দোসরদেরকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কাঠগড়ায় এখনো দাঁড় করাতে পারেনি। জুলাই গণহত্যার দায়ে গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোন চার্জশিট জমা দিতে পারেনি। ৫ মে গণহত্যা সহ খুনী হাসিনার আমলে সংঘটিত সকল গুম ও হত্যাকাÐের আসামীদের বিরুদ্ধে এখনো সুস্পষ্ট সাক্ষীপ্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি প্রসিকিউশন। বিগত সাড়ে ১৫ বছরে আলেম-উলামা ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। নতুন করে মামলাবাজদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলার শিকার হচ্ছে লোকজন। ফ্যাসিস্টের তাবেদার কিছু আমলা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রশাসনে এখনো ঘাপটি মেরে রয়েছে। শহীদ ও আহত বেশ কিছু পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগীতার অভিযোগ উঠেছে। প্রায় শতাধিক পণ্যের উপর অতিরিক্ত কর ও ভ্যাট আরোপের প্রজ্ঞাপন জারি করে জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি করা হয়েছে। এখনো পাচারকৃত কোন অর্থ ফিরিয়ে আনতে পারেনি। গত সেপ্টেম্বর মাসে ১১ টি সংস্কার কমিশন গঠন করলেও এখনো পর্যন্ত মাত্র ৪টি কমিশন তাদের রিপোর্ট জমা দিতে সক্ষম হয়েছে।
খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সাধারণ অধিবেশন ২০২৫ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উপরোক্ত সীমাবদ্ধতাগুলো উত্তরণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, দ্রæত সময়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ২০২৫ এর মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা, ‘বহুত্ববাদ’ কে বাদ দিয়ে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ^াসকে সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে প্রতিস্থাপন করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল ও কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন না করার নিশ্চয়তা সহ সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাকী পরিবর্তনের চেয়েও সেবা এবং নৈতিক মানগত উন্নতি নিশ্চিত করার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
প্রস্তাব-৪: ভারতীয় আধিপত্যবাদ প্রসঙ্গ
খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সাধারণ অধিবেশন গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, বিগত সাড়ে ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অবৈধ সরকারকে টিকে থাকতে সর্বোচ্চ মদদ যুগিয়েছিল বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের ডীপ স্টেট। নিজের ক্ষমতার স্বার্থে ভারতের কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিতে এমন কোন হীন অপকর্ম নেই যা শেখ হাসিনা ও তার দোসররা করেন নাই। এই খুনী সরকারের পতনের পরও ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একের পর এক তথ্য সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। গুলি চালিয়ে ও জমি দখল করে সীমান্তে উস্কানী দিচ্ছে, আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারি হাই কমিশনে হামলা চালিয়েছে। শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত সরকার বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালানোর সুযোগ করে দিচ্ছে। আজকের এই অধিবেশন থেকে আমরা ভারতীয় আধিপত্যবাদী এই নগ্ন আচরণের তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছি। ভারতকে বাংলাদেশের উপর আধিপত্যবাদী মানসিকতা পরিহার করে ন্যায্য ও সাম্যতার ভিত্তিতে প্রতিবেশী ও বন্ধুত্বসুলভ আচরণের আহ্বান জানাচ্ছি। শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জোর দাবি জানাচ্ছি। ভারতের সাথে বাংলাদেশের ট্রানজিট সহ সকল অসম চুক্তি বাতিলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রস্তাব-৫: গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা, যুদ্ধবিরতি ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা প্রসঙ্গ
খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সাধারণ অধিবেশন তীব্র ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করেছে যে, অর্ধশতাব্দীরও বেশি কাল ধরে ইহুদীবাদী ইসরাইল ফিলিস্তিনীদের উপর অকথ্য নির্যাতন, গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ৮ অক্টোবর ২০২৩ এর পর থেকে বিগত ১৫ মাস ধরে চলা ইসরাইলী আগ্রাসনে ফিলিস্তিনের গাজায় জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী ৪৭ হাজারের বেশি মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছে। প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার মানুষকে মারাত্মক জখম ও পঙ্গু করে ফেলা হয়েছে। তবে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক একটি গবেষণা সংস্থার মতে ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপাপড়া ও গণকবরের সন্ধানের পর নিহতের সংখ্যা ২ লাখের কাছাকাছি হবে। যাদের দুই তৃতীয়াংশ হচ্ছেন নারী ও শিশু। এর মধ্যে হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে দেশে ও দেশের বাহিরেও টার্গেট করে হত্যা করেছে বর্বর ইসরাইল। হত্যা করা হয়েছে পার্শ^বর্তী দেশের ইসরাইল বিরোধী মুসলিম নেতৃবৃন্দকেও। ইতিমধ্যে গাজার ৮৫ ভাগের বেশি বিল্ডিং ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, যা পরিষ্কার করে পুননির্মাণ করতে সময় লাগবে কমপক্ষে ২০ বছর এবং খরচ হবে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। আমরা আজকের এই অধিবেশন থেকে ইসরাইলী এসব বর্বরতার বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা ও ধিক্কার জানাচ্ছি এবং আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরাইলের বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি গত ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে চলমান হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব কামনা করছি। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি এবং গাজা পুনর্গঠনে এগিয়ে আসার জন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও রাষ্ট্র সমূহকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।