নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবী আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে অবতীর্ণ হতে হবেঃ ড. আহমদ আবদুল কাদের

ঢাকা, ২৭ অক্টোবর ২০১৭ঃ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেছেন, মিয়ানমার একটি অমানবিক রাষ্ট্র। তারা নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর বর্বরোচিত হত্যা, জুলুম, নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে মিয়ানমার সরকারের নেত্রী সূ চি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলছে। অথচ এখনো লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলামান প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এদেশের মানুষ এক বেলা খেয়ে এক বেলার খাবার রোহিঙ্গাদের দিবে, তবু তাদের মৃতু্যূর মুখে ঠেলে দেয়া যাবে না। পূর্ণ নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা ছাড়া মিয়ানমারের জালিমদের হাতে রোহিঙ্গাদের ঠেলে দেয়া যাবে না। খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী আয়োজিত ওয়ার্ড প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

আজ ২৭ অক্টোবর শুক্রবার সকাল ৯টায় রাজধানীর কাকরাইলস্থ ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স-এর মাল্টিপারপাস হলে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরীর সভাপতি শেখ গোলাম আসগরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। বিশেষ অতিথি ছিলেন নায়েবে আমীর মাওলানা সৈয়দ মুজিবর রহমান, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুগ্মমহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল হালিম, অধ্যাপক মো: আবদুল জলিল, মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী, ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইলিয়াস আহমদ, ঢাকা মহানগরীর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খন্দকার সাহাব উদ্দিন আহমদ, হাজী নূর হোসাইন, মাওলানা আজিজুল হক, মোঃ রমজান আলী, আবদুল গাফফার, মাওলান মুহাম্মদ ইব্রাহীম, এবিএম শহীদুল ইসলাম, এস এম শরীফ মাহমুদ, মুহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন, মাওলানা মো: সামসুজ জোহা, মো: আমজাদ বেলাল, মাওলানা মেজবাহ উদ্দিন, মাওলানা আনিসুর রহমান, শামসুল ইসলাম।
ঢাকা মহানগরীর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাওহিদুল ইসলাম তুহিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয়ে প্রস্তাব পেশ করেন মোঃ আবুল হোসাইন, প্রকৌশলী আবদুল হাফিজ খসরু, মাওলানা সাইফুদ্দিন আহমদ খন্দকার, মো: ফয়জুল ইসলাম, মো: হারুনূর রশীদ, কাজী আরিফুর রহমান, মোঃ সেলিম হোসাইন।
সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বায়তুলমাল ও আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট মো: মিজানুর রহমান, অধ্যাপক কে এম আলম, মাওলানা নূরুজ্জামান খান, ডাঃ কে এম নজরুল হক, মাওলানা শামসুজ্জামান চৌধুরী, মাওলানা আহমদ বিলাল, মাস্টার রওশন আলী, ঢাকা মহানগরীর সহসভাপতি মাওলানা নূরুল হক, ডাঃ রিফাত হোসেন মালিক, মাওলানা শরিফুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম, মোঃ হুমায়ুন কবির আজাদ, মাওলানা ফারুক আহমদ, মাওলানা ওজায়ের আমীন প্রমুখ।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, দেশ-জাতি আজ নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত। কিন্তু আজকে যারা ক্ষমতায় বসে আছেন বা দেশ চালাচ্ছেন তারা চলমান সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছেন। দেশে হত্যা, গুম, ধর্ষণ মহামারি আকার ধারণ করেছে। আগামী বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা আছে। আমরা দাবী করে আসছি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধিনে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। কিন্তু বর্তমান সরকার পরাজয়ের ভয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন দিবে না। তাই এ দাবী আদায়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম ও আন্দোলনে অবতীর্ণ হতে হবে।
নায়েবে আমীর মাওলানা সৈয়দ মুজিবর রহমান বলেন, দেশের প্রতিটি সেক্টর আজ পাপ- দুর্নীতিতে ভরে গেছে। এর দায় সরকারকেই বহন করতে হবে। খেলাফত মজলিস দেশ ও জনগণের শান্তি ও উন্নতির জন্যে কাজ করছে। এ কাজকে সর্বস্তরের জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।
নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। মানুষের ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত সকল সমস্যার সমাধান ইসলামে রয়েছে। আমাদেরকে এ আদর্শ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
নায়েবে আমীর অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আজ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে পরীক্ষা শুরুর আধাঘন্টা আগে পরীক্ষার্থীদের হলে প্রবশ করতে বলা হচ্ছে। অথচ প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। শিক্ষার মান আজ তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে।
যুগ্মমহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলেছে। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পরবর্তী সকল নির্বাচন ছিল প্রহসনমূলক। সরকার বিচার বিভাগের পরে এখন তাদের মনোনিত প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ইতিহাস শিক্ষা দিতে চায়।
যুগ্মমহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী আলী বলেন, খেলাফত তথা ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলকে জোরদার করা ছাড়া কোন অবস্থাতেই বিরাজমান দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। নৈতিক অবক্ষয়ে ভেঙ্গে পরা এই সমাজকে পুনর্গঠিত করতে হলে মানব মুক্তির আদর্শ- খেলাফতের দাওয়াত সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।
সভাপতির বক্তবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানী তেলের দাম সর্বনি¤œ পর্যায়ে থাকলেও আমাদের দেশে জ্বালানী তেলের দাম কমানো হচ্ছে না। বাজারে এক দিকে ভেজাল পণ্যের ছড়াছড়ি অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে। সমাজের সর্বস্তরে অমানবিকতা, অশান্তি ও দুর্নিতী যেভাবে বেড়েছে তা সচেতন মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। অশ্লীলতা, বেহাপনা আর সর্বব্যাপী বিস্তৃত মাদকের ভয়াবহতা এখন চরমে পৌঁছেছে। এ পরিস্থিতিতে আগামী প্রজন্মের হাতে আমরা কেমন বাংলাদেশ তুলে দিতে পারব তা নিয়ে সচেতন অভিভাবরা শংকিত।

সম্মেলনে ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা, যানজট ও গণপরিবহনে নৈরাজ্য প্রসঙ্গ, চাল, ডাল ও জ্বালানীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গ, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যা ও দেশে দেশে মুসলিম নির্যাতন প্রসঙ্গ, অস্বাভাবিক হারে হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স ফি বৃদ্ধি প্রসঙ্গ, সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয় এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি প্রসঙ্গ, বেকারত্ব ও আর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা প্রসঙ্গ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিবেশ স্বাভাবিক করা প্রসঙ্গে ৭টি প্রস্তাব গ্রহীত হয়।