ঢাকা, ৭ এপ্রিল ২০২৩: খেলাফত মজলিসের আমীর, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার সাবেক মহাপরিচালক শায়খুল হাদীস মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী আজ ৭ এপ্রিল ইফতারের মুহূর্তে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে মরহুমের বয়স হয়েছিলো ৭৩ বছর। তিনি স্ত্রী, ৪ ছেলে, ৩ মেয়ে রেখে যান। আজ নারায়ণগঞ্জে খেলাফত মজলিসের ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে ইফতার গ্রহণকালে তিনি স্ট্রোক করেন এবং সাথে সাথে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
শোক: খেলাফত মজলিসের আমীর, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার সাবেক মহাপরিচালক শায়খুল হাদীস মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরীর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। প্রদত্ত এক শোক বাণীতে তিনি বলেন, মরহুম মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত খেলাফত প্রতিষ্ঠার কাজে ময়দানে সক্রিয় ছিলেন। দ্বীনের প্রচার প্রসার এবং ইলমে দ্বীনের বিস্তারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি মরহুম মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরীর রুহের মাগফিরাত কামনা করে মহান আল্লাহর দরবারে তাঁর জান্নাতুল ফেরদাউস নসিবের জন্য দোয়া করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
মরহুম মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরীর মৃত্যুতে আরো শোক প্রকাশ করেছেন খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল বাছিত আজাত, মাওলানা সাখাওয়াত হেসাইন, হাফিজ মাওলানা মজদুদ্দিন আহমদ, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, অধ্যাপক আবদুল্লাহ ফরিদ, মাওলানার আবদুল কাদির সালেহ, অধ্যাপক সিরাজুল হক, ইসলামী যুব মজলিসের আহŸায়ক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সাল, সদস্য সচিব তাওহীদুল ইসলাম তুহিন, ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিলাল আহমদ চৌধুরী, সেক্রেটারি জেনারেল রায়হান আলী, শ্রমিক মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রভাষক আবদুল করিম, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবুল কালাম, জাতীয় সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি এডভোকেট একেএম বদরুদ্দোজা, সাধারণ সম্পাদক কাজী আরিফুর রহমান, ডক্টর সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি ডাঃ আবদুল্লাহ খান, সাধারণ সম্পাদক ডা: আখলাক আহমদ, দাবানল শিল্পী গোষ্ঠীরর পরিচালক কাউসার আহমদ সোহাইল।
শায়খুল হাদিস মাওলানা জুবায়ের আহমেদ চৌধুরীর ইন্তেকালের শোক জানিয়ে বিবৃতিদাতাদের মধ্যে অারো রয়েছেন- বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী ও মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের অপর অংশের আমির মাওলানা আবু জাফর কাসেমী, সিনিয়র নায়েবে আমির শাইখুল হাদিস মাওলানা আবুল কাশেম কাসেমী, মহাসচিব আলহাজ আজম খান, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের আমির মাওলানা মুহাম্মদ হোসাইন আকন্দ, ঢাকা মহানগর সহসভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন আজমি, ইব্রাহিম বিন আলী, আলী মাকসুদ খান মামুন, মাওলানা মুহাম্মদ মাহবুবুল্লাহ, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী ও মহাসচিব মাওলানা ডক্টর গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির আল্লামা ছরওয়ার কামাল আজিজি ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার, ঢাকা মহানগর আমির প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু তাহের খান ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মুফতি দ্বীনে আলম হারুনী, ইসলামী যুবসমাজের সভাপতি মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী ও মহাসচিব মাওলানা আবদুল্লাহ আল মাসউদ খান, ইসলমী ছাত্রসমাজের সভাপতি এহতেশামুল হক সাখী ও মহাসচিব আমীর জেহাদী, নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মুফতি মুজিবুর রহমান, নির্বাহী সভাপতি ও জাতীয় সংহতি মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী মাওলানা এ কে এম আশরাফুল হক সহসভাপতি মাওলানা নওফেল আহমদ, মাওলানা মাহবুবুর রহমান, মাওলানা আসগর আলী, মহাসচিব মাওলানা মুমিনুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা যোবায়ের হোসাইন নেজামী, মাওলানা নজরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, সেক্রেটারি ডা: মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, সেক্রেটারি মাওলানা আরিফুল ইসলাম, জাতীয় শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক নাসির উদ্দিন খান, সেক্রেটারি জেনারেল প্রভাষক আব্দুস সবুর, জাতীয় তাফসির পরিষদের সভাপতি মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম প্রমুখ।
আরো শোক প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা সুজা, নির্বাহী সভাপতি আবদুল আজিজ হাওলাদার, মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, স্থায়ী কমিটির সদস্য মো: আনোয়ার হোসেন আবুড়ী, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা শায়খ জিয়া উদ্দীন, মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, খেলাফত মজলিসের আমির শায়খুল হাদিস আল্লামা ইসমাঈল নূরপুরী ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী প্রমুখ।
আগামীকাল বিকাল ৩টায় মৌলভীবাজার সরকারী হাই স্কুল মাঠে মরহুমের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
জন্ম : মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার শহরের শাহ মোস্তফা রোডস্থ বাসায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মাওলানা আব্দুন নূর শায়খে ইন্দেশ্বরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি একজন প্রখ্যাত বুযুর্গ আলেম ছিলেন।
শিক্ষাজীবন : পিতার প্রতিষ্ঠিত মৌলভীবাজার শহরস্থ আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুমে ১৯৬৬ইং সনে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ১৯৬৭ সনে ঢাকার প্রাচীনতম মাদরাসা আশরাফুল উলুম বড়কাটারায় এক বছর পড়ালেখা করেন। ১৯৬৮ সালে জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগে অধ্যয়নের পর সিলেটে চলে যান। ১৯৬৯-৭০ সালে জামিয়া হোসাইনিয়া গহরপুরের সানাবিয়্যাহ ২য় ও ফযীলত ১ম সমাপ্ত করেন। ১৯৭১-৭২ সালে মৌলভীবাজারের সুপ্রসিদ্ধ জামিয়া লুৎফিয়া আনোয়ারুল উলূম বরুনায় মেশকাত এবং দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবন : ১৯৭৩ সালে নেত্রকোনার মউ মাদরাসায় হাদীসের দরস প্রদানের মাধ্যমে জীবনের প্রথম শিক্ষকতা করেন। একবছর পর সেখান থেকে আবার ফিরে যান নিজ জেলা মৌলভীবাজারে। ১৯৭৪ সালে দেশের প্রাচীনতম দ্বীনি প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া রায়পুরে শিক্ষকতা করেন। ১৯৭৫ সালের ১১ই নভেম্বর মৌলভীবাজার ডিগ্রী কলেজে ইসলামিয়াত ও ইসলামিক হিস্ট্রি বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে নিয়োাগ প্রাপ্ত হন। সেখানে ১৯৭৮ সালের শেষ পর্যন্ত প্রায় তিন বছর অধ্যাপনা করেন। ১৯৭৯-৮০ সালে সিলেটের জামেয়া মদিনাতুল উলুম দারুস সালাম খাসদবীরে হাদীসের খেদমত আঞ্জাম দেন। ১৯৮১-৮৩ এর মাঝামাঝি জামিয়া লুৎফিয়া আনোয়ারুল উলূম বরুণায় সিনিযার মুহাদ্দিস হিসেবে দ্বীনী শিক্ষার ধারা অব্যাহত রাখেন। ১৯৮৩ সালের শেষের দিকে যখন জামিয়া শারঈয়্যাহ মালিবাগ-ঢাকা দাওরায়ে হাদীস মাদ্রাসা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে তখন থেকে ১৯৮৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত সেখানে দাওরায়ে হাদীসের শিক্ষক এবং পাশাপশি জামেয়ার প্রথম ভাইস প্রিন্সিপালেরর দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়াও ১৯৮৩-৮৫’র আগস্ট পর্যন্ত ইসলামী ইউনিভার্সিটি কুষ্টিয়ার ভাইস চান্সেলরের গাইডেন্সে তাফসিরে মাতুরীদী (ইমাম মাতুরীদী)-এর একমাত্র গবেষক হিসেবে কাজ করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত ইসলামী বিশ্বকোষের অনুবাদক ও নিবন্ধকার ছিলেন। এই সময়ে তিনি তারযুমানুস সুন্নাহ দ্বিতীয় খÐের অনুবাদ করেন। ১৯৮৫ সালের ২২শে আগস্ট বৃটেন চলে যান এবং ১৯৮৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ২বছর সেখানে অবস্থান করেন। সেখানে অবস্থানকালে তিনি হ্যাম্পশায়ারের সাঊদাম্পটন সিটি কাউন্সিলে বাংলাদেশী প্রবাসীদের পক্ষে মনোনীত বিশেষ কাউন্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর দেশে ফিরে আসেন।
১৯৮৮-৯০ এই তিন বছর রাজনগর উপজেলার জামেয়া হেমায়তুল ইসলাম গড়গাঁও-এ সিনিয়র মুহাদ্দিস হিসেবে শিক্ষাদান করেন। ১৯৯০ সালে মৌলভীবাজার শহরস্থ জামেয়া দ্বীনিয়া প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন এবং প্রায় তিন বছরকাল সেখানে বোখারী ও মুসলিম শরীফের খেদমত আঞ্জাম দেন। ১৯৯৩-৯৫ এই তিন বছর আবার ২য় বারের মতো জামেয়া হেমায়তুল ইসলাম গড়গাঁও-এ সিনিয়র মুহাদ্দিস হিসেবে অধ্যাপনা করেন। তারপর মৌলভীবাজার শহরস্থ তাঁর নিজ এলাকা বর্ষিজোড়ায় হাজিরিয়া মদিনাতুল উলুম মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০০৭ সাল পর্যন্ত সেখানে প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। ২০০৮ সালের শুরু থেকে ২০১৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় সাত বছরেরও অধিককাল কমলগঞ্জের জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হাদিস মুন্সিবাজারের শায়খুল হাদীস হিসেবে খেদমত আঞ্জাম দেন।
বেফাকে যোগদান : ২০১৪ হতে রন ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর পর্যন্ত বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহকারি মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত বেফাকের মহাপরিচালক দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তারাবো বিশ্বরোড জামিয়া ক্বাওমিয়া আরাবিয়ার শায়খুল হাদিসের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি বেফাকের আমেলা সদস্যও।
উল্লেখযোগ্য ছাত্র : বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের মরহুম যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, মাওলানা ইসহাক ফরিদী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, আহকামে জিন্দেগিসহ বহু গ্রন্থপ্রণেতা মাওলানা হেমায়েত উদ্দীন, জামিয়াতুন নূর কাসেমিয়া উত্তরার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগের মুহাদ্দিস আবু সাবের আব্দুল্লাহ, জামিয়া আযমিয়া দারুল উলূম বনশ্রীর মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ প্রমুখ।
মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী ১৯৮৯ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত খেলাফত মজলিসের মৌলভীবাজার জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালের দিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক হন। ২০১০ সাল থেকে বেফাকের যোগদানের পূর্ব পর্যন্ত নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। বেফাক থেকে চলে আসার পর ফের নায়েবে আমীর হন। ২০২১-২০২২ সেশনে দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর নির্বাচিত হন এবং বিগত ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ খেলাফত মজলিসের আমীর নির্বাচিত হন।