এখন বাজেট মানেই জনগণের উপর নতুন নতুন কর আর রাষ্ট্রের ঋণের বোঝা বৃদ্ধি – ড. আহমদ আবদুল কাদের
ঢাকা, ৩ জুন ২০২৩: খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, এখন বাজেট মানেই জনগণের উপর নতুন নতুন কর আর রাষ্ট্রের ঋণের বোঝা বৃদ্ধি। প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ জনগণের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হবে না। এর মাধ্যমে দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠা সম্ভব নয়। খেলাফত মজলিস আয়োজিত বাজেট পর্যালোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আজ বিকাল ৫টায় পল্টনস্থ মজলিস মিলনায়তনে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড: আহমদ আবদুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪’ পর্যালোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা করেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ ফরিদ, সাবেক অতিরিক্ত সচিব জনাব আবু আবদুল্লাহ, সাবেক যুগ্ম সচিব জনাব নূরুল আলম, সংগঠনের যুগ্মমহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, অধ্যাপক মোঃ আবদুল জলিল, অধ্যাপক কাজী মিনহাজুল আলম, মুফতি আবদুল হক আমিনী, মো: জিল্লুর রহমান, অধ্যাপক মাওলানা আজীজুল হক প্রমুখ।
পর্যালোচনা সভার সম্মানিত আলোচকবৃন্দ বলেন, ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত এ বাজেটে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বিশাল অংকের ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি মেটাতে দেশ-বিদেশ থেকে চড়া সূদে ঋণ নিতে হবে সরকারকে। বিশেষ করে দেশীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নিবে। এতে বেসরকারি ও ব্যক্তিগত খাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্থ হবে। বিদেশ থেকে ঋণ নেয়া হবে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। বাজেট ব্যয়ের বিশাল অংশ খরচ হবে ঋণের সুদ পরিশোধে। বাজেট ব্যয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তর খাত হচ্ছে সুদ পরিশোধ। পরিচালন ব্যয় ও সুদ পরিশোধের মত অনুন্নয়ন খাতেই ব্যয় হবে বাজেটের অধিকাংশ অর্থ।
প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রাও বাস্তব সম্মত নয়। ঋণ নির্ভর বাজেটের কারণে জনগণের উপর জাতীয় ঋণের বোঝা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলছে। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভয়াবহ সংকটের নিপতিত হবে। দেশের রিজার্ভের পরিমানও দিন দিন কমে যাচ্ছে। এই বাজেট উচ্চাবিলাসী ও নির্বাচনকে সামনে রেখে তৈরি করা হয়েছে, যা জনতুষ্টির অবাস্তব বাজেট। দেশের রিজার্ভ যেখানে প্রতিনিয়ত কমছেই সেখানে তা কমে যাওয়া ঠেকাতে কোন পদক্ষেপ এই বাজেটে নেই। নির্বাচনকে সামনে রেখে শুধু জনতুষ্টির কথা বিবেচনা করেই এই অবাস্তব বাজেটের কারণে অর্থনীতির ওপর নতুন চাপ সৃষ্টি করবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কথা স্বীকার করা হয়নি এবং সংকট মোকাবিলার কোনো সমাধানও দেওয়া হয়নি। এ বাজেট দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে কোন ভূমিকা রাখবে না বরং নতুন করে বহু জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। গৃহস্থালী জিনিসপত্র, কলম-সহ শিক্ষা সামগ্রী, পেট্রোল, অকটেন, ডিজেলের দাম বাড়বে। বাজেটের আকার আগের বাজেটের তুলনায় বেড়েছে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অথচ স্বাস্থ্যখাতে বেড়েছে মাত্র ৩.২৩ শতাংশ। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমে জিডিপির ১.৭৬% হয়েছে যা গত বাজেটে ছিল ১.৮৩%।
এবারের বাজেটে আইএমএফের কঠিন শর্তগুলো অনেকটা ‘ছায়া’ আকারে থাকছে। গত বছরের তুলনায় দেশের প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে, কারণ এখন কোষাগারে টাকাও নেই, ডলারও নেই। সামনে দেশকে বড় ধরনের ঘাটতি একসাথে মোকাবেলা করতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। বিশ্ববাজারে অনেক কিছুর দাম কমে আসলেও তার প্রভাব এবারের বাজেটে নেই। মূল্যস্ফীতির অস্বাভাবিক সংকট কীভাবে সামলানো হবে, তার সুস্পষ্ট পরিকল্পনা বাজেটে নেই। এতে জনগণকে মূল্যস্ফীতির আরো বড় ধরণের চাপে পড়তে হতে পারে। করমুক্ত আয়ের সীমা কিছুটা বাড়ালেও সকল টিনধারীর জন্য ন্যুনতম কর ২ হাজার টাকার প্রস্তাব করে প্রকারান্তরে সকল টিনধারীকেই কর দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। অথচ সকলের করা দেয়া এই সামর্থ নেই। গরীবের পকেট কেটে কর বের করার বাজেট কখনো জনবান্ধব হতে পারে না।